ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) | মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. এনামুর রহমান এনাম, তৎপরতা চালাচ্ছেন আরও ছয় সম্ভাব্য প্রার্থী

ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) | মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. এনামুর রহমান এনাম, তৎপরতা চালাচ্ছেন আরও ছয় সম্ভাব্য প্রার্থী

https://youtu.be/Iuwp-mgvggw
ঢাকা-১৯ (সাভার-আশুলিয়া) আসনে আগামী নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান এমপি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. এনামুর রহমান এনাম আগামীবারও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাকে টেক্কা দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে তৎপরতা চালাচ্ছেন আরও ছয় সম্ভাব্য প্রার্থী। তারা হলেন- ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি তালুকদার মো. তৌহিদ জং মুরাদ ও সহসভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ কবির, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক হাসিনা দৌলা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আহমেদ নাসিম পাভেল ও ফারুক হাসান তুহিন এবং তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল আলম সমর।

এ ছাড়া মহাজোটের সমর্থন নিয়ে এ আসনের প্রার্থী হতে চান জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ এবং সাভার উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ। বিগত দুই নির্বাচনেও তারা মহাজোটের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন।

রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভার উপজেলার পাথালিয়া, ইয়ারপুর, বিরুলিয়া, সাভার সদর, বনগাঁও, কাউন্দিয়া, শিমুলিয়া, ধামসোনা ও আশুলিয়া ইউনিয়ন এবং সাভার পৌরসভা নিয়ে ঢাকা-১৯ আসন। সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মো. সালাউদ্দিন বাবুকে রেকর্ডসংখ্যক ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুরাদ জং। বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটি সেই থেকে এখন অবধি আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে এ আসনের এমপি নির্বাচিত হন স্থানীয় এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. এনামুর রহমান এনাম। ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে আহত শ্রমিকদের তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশবাসীর নজর কাড়েন ডা. এনাম। রানা প্লাজা নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা মুরাদ জংকে বাদ দিয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততাহীন ডা. এনামকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। আগামীবারও তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় পোস্টারিংয়ের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে নিয়মিত গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশ করছেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদ পাওয়ায় দলীয় রাজনীতিতে নিজের প্রভাববলয় সৃষ্টির পাশাপাশি মনোনয়ন দৌড়ে কিছুটা এগিয়েও রয়েছেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক কোন্দল নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে তিনি। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা মনোনয়ন দৌড়ে নামায় বেকায়দায় পড়তে পারেন ডা. এনাম।

সাবেক এমপি মুরাদ জং বেশ কিছুদিন নীরবে কাটিয়ে নির্বাচনের আগে ফের সরব হয়েছেন। নিজের সময়ে করা উন্নয়ন কাজের প্রচার চালিয়ে গণসংযোগে নেমেছেন তিনি। পারিবারিকভাবে এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে মুরাদ জংয়ের। তার বাবা বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ও সাবেক এমপি প্রয়াত আনোয়ার জং সাভার এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন।

দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ফিরোজ কবির সাভার উপজেলার তিন দফায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। দীর্ঘদিন জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে মানুষের মধ্যে পরিচিতি রয়েছে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের এ সহসভাপতির।

হাসিনা দৌলা দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেও তার তৎপরতা তেমন একটা চোখে পড়ছে না। দলের সাভার উপজেলা সভাপতি হিসেবে দলীয় রাজনীতিতে প্রভাব রয়েছে তার। তবে জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় কিছুটা বেকায়দায় রয়েছেন তিনি। এমন অভিযোগের কারণে ২০১৬ সালের শেষভাগে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনকালে ঢাকা জেলা থেকে দলীয় মনোনয়ন পাননি তিনি।

আবু আহমেদ নাসিম পাভেলও দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। বিভিন্ন উপলক্ষে এলাকায় যুবলীগের এ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে লাগানো পোস্টার ও ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়ছে। আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ফারুক হাসান তুহিন ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে শুরু করে বর্তমান পর্যায়ে উঠে এসেছেন। সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক এ জিএস বর্তমানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এলাকার তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে তরুণ এ নেতার।

ফখরুল আলম সমর দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের বর্তমান এ চেয়ারম্যানের এলাকায় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

বর্তমান এমপি ডা. এনামুর রহমান সমকালকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তিনি এলাকায় গত প্রায় পাঁচ বছরে যে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন, তাতে মানুষ তার পক্ষেই রয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই বিজয়ী হবেন তিনি। দলে তাকে নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব কিংবা গ্রুপিং নেই। বরং তিনি অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে দলের সব নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।

তালুকদার মো. তৌহিদ মুরাদ জং বলেন, এ আসনে বিএনপির সঙ্গে ভোটের লড়াইয়ে জিততে কাকে প্রার্থী করা হলে নৌকার জয় নিশ্চিত হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি ভালো করেই জানেন। এ বিবেচনায় তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন বলে তার বিশ্বাস। আর মনোনয়ন পেলে ২০০৮ সালের নির্বাচনের চেয়েও বেশি ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীকে হারাবেন।

ফিরোজ কবির বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে এবং এখানে ‘ধার করা’ প্রার্থী দেওয়া হলে দলের যে ভরাডুবি হবে, নেত্রী (শেখ হাসিনা) সেটা বোঝেন। তাই স্থানীয় হিসেবে তাকেই এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে মনে করেন তিনি।

হাসিনা দৌলা বলেন, দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নির্বাচন করতে প্রস্তুত তিনি। তবে মনোনয়ন প্রশ্নে দলের যে কোনো সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন তিনি।

আবু আহমেদ নাসিম পাভেল বলেন, সাভারের উন্নয়নের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা নেতাদের মধ্য থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে তার বিশ্বাস। এর পরও দল অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলেও নৌকাকে বিজয়ী করতে তার পক্ষেই কাজ করবেন তিনি।

ফারুক হাসান তুহিন বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রয়েছেন- এমন কাউকে প্রার্থী করা হলে এ আসনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব। এমন বিবেচনায় তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে মনে করেন তিনি। আর মনোনয়ন পেলে সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও জনগণের সমর্থনে জিতে আসতে পারবেন বলেও বিশ্বাস রয়েছে তার।

ফখরুল আলম সমর বলেন, তিনি দুধের মাছি নন। দুঃসময়ে দলের সঙ্গে ছিলেন, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন। নৌকার জয়ের জন্যই তিনি কাজ করবেন।

বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ বলেন, তার দল জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করলে দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। আর মহাজোটগত নির্বাচন হলে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই মেনে নেবেন।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জোটের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও দলের নির্দেশে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন তিনি। এবারও জাতীয় পার্টি তাকেই মনোনয়ন দেবে বলেই তার বিশ্বাস।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment